বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো সোমবার। পাছে দাম বেড়ে যায়, তাই রবিবারই বাজারে হাজির হয়েছিলেন যোধপুর পার্কের হিরণ্ময় চক্রবর্তী। লিস্ট মিলিয়ে তিনটি পেয়ারা ব্যাগে ঢুকিয়ে দাম দিতে মানিব্যাগটা পকেট থেকে বার করেছেন কি করেননি, দাম শুনে ভিরমি খাওয়ার জোগাড়! তিনটি পেয়ারার দাম ৪০ টাকা! চেনা ফলওয়ালা। বছরভর পেয়ারা, শশা, কলা- বারুইপুরের ওই ফল-বিক্রেতার থেকেই কেনেন অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসারটি। তাই দরদস্তুর না করেই তিনটি পেয়ারা নিয়েছিলেন। তার পরে এমন চমক লাগবে ভাবেননি।
দুর্গাপুজো বেশির ভাগই বারোয়ারি। তাই ভোগ বা ফলের খরচ নিয়ে আমজনতাকে ভাবতে হয় না। তা পুজোকমিটিদেরই দায়িত্ব। তবে লক্ষ্মীপুজোর জন্য বাজারে গিয়ে আঁচটা টের পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। গোবিন্দভোগ চাল, মুগের ডাল, চিনি সব কিছুর দাম পুজোর আগের সপ্তাহ থেকে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। আর ফলের দাম তো লাগামছাড়া।
তিথি অনুযায়ী সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত লক্ষ্মীপুজো। বাগুইআটির সাহানা দত্ত বাড়ির সামনে ফেরিওয়ালার কাছ থেকেই দু’টো আখ কেনার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু ফেরিওয়ালা কিছুতেই একটি আখের দাম ২৫ টাকা থেকে কমাতে চাইছিলেন না। বাজেট বাড়াননি সাহানাদেবী। একটি আখ কিনে খরচে লাগাম টেনেছেন। বিজয়া করতে গিয়ে শনিবার ইছাপুরের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তিনটি নারকেল নিয়ে এসেছেন। পাড়ার বৌদি জানিয়েছেন, বাজারে ওই সাইজের তিনটি নারকেল ৫০ টাকাতেও অমিল।
তবে পুজোটা দেরিতে হওয়ায় ফুলকপির দামটা কিছু কম। ঝাড়খণ্ড ছাড়া উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনার স্থানীয় ফুলকপি বাজারে এসেছে। বেগুনের দামটাও রবিবার পর্যন্ত তেমন বাড়েনি। সরবরাহেও ঘাটতি নেই। কিন্তু তাতেও শান্তি নেই। সাহানাদেবীর মন্তব্য, ‘‘শুধু সবজিতে তো চলবে না! খিচুড়ি চাই। গোবিন্দভোগ চাল আর সোনামুগের ডাল দামের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ফলের সঙ্গে না হয় আপোস করতে পারি, কিন্তু খিচুড়ি তো না হলেই নয়!’’ গোবিন্দভোগ চাল কোথাও কোথাও বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা-১০০ টাকা কেজি দরে। মুগডাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২৫ টাকা-১৫০ টাকার মধ্যে। রবিবার বিভিন্ন বাজারে মাঝারি ফুলকপি বিক্রি হয়েছে প্রতিটি ১৫ থেকে ২০ টাকা। বাঁধাকপি প্রতিটি ১৫ থেকে ২০ টাকা। বরবটি, টোম্যাটো, ঢ্যাঁড়শ কেজিতে ৪০ -৫০ টাকা। বেগুন বিকোচ্ছে কেজি প্রতি ৩০ -৪০ টাকায়।
পদ্মফুল ছাড়া লক্ষ্মীপুজো ভাবা যায় না। রবিবার জগন্নাথ ঘাটের ফুলবাজারে এক-একটি পদ্ম বিকিয়েছে ১২-১৫ টাকায়। পুজোর আগে তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় এ বার পদ্মের জোগান ভালই। এ দিন গাঁদা ফুলের দর ছিল ১৫ টাকা কেজি। তবে ছোট সাইজের গাঁদা ফুলের দাম কিছুটা কম। ১২ টাকা প্রতি কেজি। কাশীপুরে ফুল বিক্রি করেন রমেন ঘোষ। তাঁর অভি়জ্ঞতায়, এ বার ফুলের চাহিদা ও জোগান সমান। তবে রজনীগন্ধার খুচরো ফুলের দাম চড়া। রবিবার পাইকারি বাজারে খুচরো রজনীগন্ধার দাম ছিল কেজি প্রতি ৪০০ টাকার বেশি।
ফল তো অগ্নিমূল্য বটেই। মহানগরের বিভিন্ন বাজারে আপেলের দাম ছিল ৭০-১০০ টাকা কেজি, খেজুর ৮০-১০০ টাকা প্রতি কেজি, মুসুম্বি বিক্রি হচ্ছে তিনটে ২০ টাকায়। ১৮০-১৯০ টাকা কেজিতে বিকোচ্ছে বেদানা। একটি নারকেলের দাম ছিল ২০-২৫ টাকার মধ্যে। যেখানে পেয়ারার দাম ৫০-৫৫ টাকা কেজি, সেখানে ন্যাসপাতি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা প্রতি কেজি।
শুধু পুজোর উপকরণই নয়। হাত দেওয়া যাচ্ছে না প্রতিমাতেও। দামের সঙ্গে আপোস করতে না পেরে অনেকেই কিনেছেন সরা। দক্ষিণ কলকাতার বড় একটি বাজারের এক দশকর্মা ভাণ্ডারের দোকানি জানালেন, ‘‘আগে সরা বিক্রিই হত না। কিছু পরিবার কিনত। কিন্তু এখন সরায় আঁকা প্রতিমার বিক্রিই সব থেকে বেশি। আমি তো দুর্গাপুজোর অনেক আগে থেকেই স্টক করে রেখেছি।’’
No comments:
Post a Comment