ছুটির দিনে সকালে মোবাইলের ক্যালকুলেটরে বাড়ির ঋণ কিস্তির হিসেব করছিলেন শঙ্কর মিত্র। হিসেব প্রায় শেষ, হঠাৎ ফোন এল। কথা শেষ করে বুঝলেন, ক্যালকুলেটরের সব হিসেব গুলিয়ে গিয়েছে। ফের নতুন করে হিসেব শুরু করতে হল তাঁকে।
ক্যালকুলেটরের এমন বিভ্রাট বারবার সইতে হয়েছিল সি গোপীনাথকেও। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি তৈরি করে ফেলেছেন স্মার্টফোনের জন্য ক্যালকুলেটর অ্যাপ। ইতিমধ্যেই আই-ফোনে ডাউনলোড করা যাচ্ছে এই অ্যাপ। শীঘ্রই অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্যও এই অ্যাপ বেরোবে বলে গোপীনাথ জানিয়েছেন। এক সময়ে সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত গোপীনাথ দীর্ঘদিন কলকাতায় কাটিয়েছেন। তাঁর তৈরি অ্যাপের নামের সঙ্গেও (ক্যালকুট) কলকাতার মিল রয়েছে।
আমজনতার উপলব্ধি, নানা প্রযুক্তি এলেও সাধারণ ব্যবহারের উপযোগী ক্যালকুলেটরের সে ভাবে অগ্রগতি হয়নি। মোবাইল ফোনে ক্যালকুলেটর থাকলেও তা কিন্তু উন্নত নয়। হিসেবের মাঝখানে অন্য কোনও কাজ করা সম্ভব নয়। কারণ, তা হলেই হিসেব নষ্ট হয়ে যায়। নতুন এই অ্যাপে এই ধরনের ঝঞ্ঝাট এড়ানো যাবে বলেই দাবি গোপীনাথের। তাঁর কথায়, ‘‘এই ক্যালকুলেটরে হিসেব ‘স্টোর’ হয়। হিসেব এডিট করার ব্যবস্থাও রয়েছে এতে। অ্যাপ থেকে ই-মেল করেও পাঠানো যায় ক্যালকুলেটরের হিসেব। দেখনদারিতেও অভিনবত্ব রয়েছে এই অ্যাপের। আকর্ষণীয় করার জন্য কালো স্ক্রিনে নীল রঙের নম্বর ঘড়ির ডায়ালের কায়দায় সাজানো হয়েছে।
বস্তুত, স্মার্টফোনের ব্যবহার যত বাড়ছে, ততই পাল্লা দিয়ে আসছে নানা অ্যাপ। বার্তা আদানপ্রদানের কিংবা ছবি-অডিও-ভিডিও ফাইল পাঠানোর অ্যাপ তো রয়েছেই, তার পাশাপাশি কেনাকাটা, সিনেমা-থিয়েটারের টিকিট কাটার জন্যও অ্যাপস বেরিয়েছে। এ বার পুজোর পাসও অনেকে অ্যাপের মাধ্যমে কিনেছেন। উবের, ওলা-র মতো ক্যাব সংস্থার বুকিংও পুরোটাই অ্যাপস নির্ভর। বছর খানেক আগে নতুন গৃহিনীদের রান্না শেখানোর জন্যও অ্যাপ ছেড়েছিলেন এক রেস্তোরাঁর কর্ণধার।
শুধু বেসরকারি সংস্থা নয়, অ্যাপ নির্ভর হতে শুরু করেছে সরকারি দফতরও। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের অ্যাপ রয়েছে, যাত্রী পরিষেবার জন্য অ্যাপ বানিয়েছে রেলও। এ বার পুজোয় ম্যাপ-গাইড প্রকাশের বদলে অ্যাপ তৈরি করেছে কলকাতা পুলিশও।
রান্না কিংবা গাড়ি বুকিংয়ের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজেও অ্যাপ নির্ভর হয়ে উঠছে, তাই সেই ব্যবহারকেই হাতিয়ার করেছেন ‘ক্যালকুট’-এর নির্মাতা। তিনি বলছেন, ‘‘ক্যালকুলেটর সব মানুষেরই কাজে লাগে। তাই অ্যাপ তৈরির জন্য এটাকেই প্রথম বেছে নেওয়া হয়েছে।’’ চলতি বছরেই অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্যও উপযোগী হয়ে উঠবে এই অ্যাপ। বাংলার পাশাপাশি হিন্দি হরফেও মিলবে এটি।
No comments:
Post a Comment